‘জমি আমি নেবই পারলে ঠেকা’- পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালীতে সাত হিন্দু পরিবারের কৃষিজমি দখল করে স্থানীয় চেয়ারম্যান

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালী ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হাওলাদার সাত হিন্দু পরিবারের কৃষিজমি দখল করে মাছের ঘের করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই পরিবারগুলোর ছয় বিঘা জমি দখল করে গত মঙ্গলবার জমির চারপাশে নালা কেটে ঘের তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ সময় ওই পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান তাদের হুমকি দেন। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান তুষখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি এবার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যানের দাপটে অসহায় হিন্দু পরিবারগুলো মঙ্গলবার রাতে প্রতিকার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মঠবাড়িয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছে।

Hindu Land Grabbing Forcefully

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তুষখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসংলগ্ন গুচ্ছগ্রামের পেছনে ২৯২ নম্বর দাগ এবং ৪৩১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত বেপারী ও বিশ্বাস বংশের সাত হিন্দু পরিবারের ছয় একর কৃষিজমি দীর্ঘদিন ধরে দখলের চেষ্টা করছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান। কিন্তু আপসে জমি না পেয়ে চেয়ারম্যান ওই পরিবারগুলোকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে জমিতে একটি মাটিকাটা মেশিন লাগিয়ে ছয় একর জমির চারপাশে নালা কেটে দখল করে নেন। জমির মালিকরা বাধা দিতে গেলে চেয়ারম্যান তাঁদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন। একপর্যায় চেয়ারম্যান বলেন, ‘জমি আমি নেবই পারলে তোরা ঠেকা।’ চেয়ারম্যানের দাপটে টিকতে না পেরে অসহায় পরিবারগুলো মঙ্গলবার গভীর রাতে মঠবাড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করে। রাতেই থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

এদিকে হিন্দু পরিবারের কৃষিজমি দখলের খবর পেয়ে বুধবার সকালে মঠবাড়িয়া উপজেলা জাতীয় হিন্দু মহা ঐক্যজোটের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই জোটের উপজেলা শাখার সভাপতি শিক্ষক অমল চন্দ্র হালদার হিন্দু পরিবারের ছয় একর কৃষিজমি দখলের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি নিন্দনীয় ও অমানবিক। তিনি দখল করা জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে স্থানীয় সাংবাদিকরা সরেজমিনে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান দাবি করেন, ওই পরিবারগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সাংবাদিকরা ওই চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী জমির মালিক প্রদীপ কুমার বেপারী অভিযোগ করে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোনো চুক্তিই হিন্দু পরিবারের হয়নি। তিনি গায়ের জোরে আমাদের ছয় একর সম্পত্তি নালা কেটে দখল করেছেন। তিনি ওই জমিতে জোর করে মাছের ঘের নির্মাণ করেছেন। আমরা বাধা দিতে গেলে তিনি নানা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দখলদার ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হাওলাদার দাবি করেন, মাছের ঘের নির্মাণের জন্য হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে তাঁর প্রাথমিক কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারগুলো থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

– See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/priyo-desh/2016/06/09/367752